প্রেস বিজ্ঞপ্তি ০৭-০৭-২০১৫ ইং

আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে প্রথম বাংলাদেশী পর্যবেক্ষক এবং প্রথম জাতীয় বায়োক্যাম্প

Press Conference on 7 July 2015

আমাদের অস্তিত্ব জৈবসামাজিক এবং আমাদের পরিমণ্ডল জীবজগত ও সমাজ থেকে অবিচ্ছিন্ন। সমাজজীবনে তাই জীবজগত এবং জৈবনিক প্রপঞ্চ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং পরিণত উপলব্ধি আধুনিক মানুষের পূর্ণাঙ্গতার অপরিহার্য ভিত্তি। প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করা, প্রকৃতির নিয়মকে জেনে সমাজের প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো এবং সর্বোপরি প্রকৃতির সাথে স্বাস্থ্যকর সহাবস্থানের ক্ষেত্রে জীব এবং জৈবনিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে উন্নত এবং স্পষ্ট ধারণা আমাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি তৈরী করে থাকে। শৈশব থেকেই শুরু হওয়া উচিত আমাদের এই অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা। বলা বাহুল্য আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সেই অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার জন্যে যথেষ্ট নয়। তাই উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্যে প্রচলিত শিক্ষার বাইরে শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসাকে জীবজগতের বিস্তৃত পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি হল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিযোগিতামূলক জ্ঞানচর্চা। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অনুরূপ চর্চা বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে চলমান রয়েছে এবং অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে সেগুলোতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।
জীববিজ্ঞান বিষয়ে এধরণের চর্চা বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ছিল না। তাই আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির স্বীকৃতি পেয়ে জীববিজ্ঞান বিষয়ের দেশের স্বনামধন্য লেখক ও শিক্ষক এবং অন্যান্য আগ্রহী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড গত প্রায় চার বছর ধরে এদেশে জীববিজ্ঞান বিষয়ে প্রতিযোগিতামূলক জ্ঞানচর্চার ধারা গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করেছে। এটি একটি অলাভজনক অরাজনৈতিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক-শিক্ষামূলক সংগঠন। উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তে ফরিদপুরে প্রথম আঞ্চলিক জীববিজ্ঞান উৎসবের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পথচলা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব।
অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় এবং সম্মানজনক আন্তর্জাতিক আসর, আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ আমন্ত্রণ লাভ করেছে। উক্ত অনুষ্ঠানটি আগামী ১২-১৯ জুলাই ২০১৫ তারিখে ডেনমার্কের আর্হাস শহরে অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বর্তমানে ৬৫ টি দেশ নিয়মিতভাবে অংশ নিয়ে থাকে। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় প্রতিটি দেশ থেকে অনধিক ছয় সদস্যের একটি করে দল অংশ নেয় যেখানে সর্বোচ্চ চারজন প্রতিযোগী এবং সর্বোচ্চ দুইজন দলনেতা থাকেন। শুধুমাত্র পূর্ণ সদস্যপদ প্রাপ্ত দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করার জন্য জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড উৎসব আয়োজন করা সহ আনুষঙ্গিক শর্তাবলী পূরণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে জীববিজ্ঞান বিষয়ক একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার অংশগ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের পূর্ণ সদস্যপদ নিশ্চিত হবে এবং পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে এই সম্মানজনক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে অংশ নিতে পারবে।
বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০১৫ তে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনীত হয়েছেন। উক্ত আন্তর্জাতিক আসরে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি ডেনমার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
এবছর আমরা একটিমাত্র জীববিজ্ঞান উৎসব করেছি। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে অন্তত আটটি আঞ্চলিক জীববিজ্ঞান উৎসব আয়োজন করে সেখান থেকে বিজয়ীদের নিয়ে জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। জাতীয় প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নিয়ে একটি বিশেষ জীববিজ্ঞান কর্মশালার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের জন্যে প্রতিযোগী নির্বাচন করা হবে। এটি আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম, যার নাম ‘বায়োক্যাম্প’। এবছর যদিও জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসবে বিজয়ীরা আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান উৎসবে অংশ নিতে পারবে না, তবু তাদের উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমরা আগামী ৩০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুরে বায়োক্যাম্প আয়োজন করতে যাচ্ছি। এই ক্যাম্পের মূল্যায়ন পরীক্ষায় যারা ভালো করবে তারা পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালের বায়োক্যাম্পে সরাসরি অংশ নিতে পারবে। অবশ্য উক্ত ক্যাম্পের বাকি অংশগ্রহণকারীরা যথারীতি জাতীয় উৎসব ২০১৬ থেকে বিজয়ী হয়ে যোগ দেবে। তাদের মধ্য থেকে সেরাদেরকে বেছে নিয়ে গঠিত হবে টিম বাংলাদেশ। আমরা আশা করছি, ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০১৬ তে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অংশ নেবে প্রথমবারের মতো।
আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে পর্যবেক্ষক প্রেরণ এবং বায়োক্যাম্প আয়োজন করার মতো দুটি ব্যয়বহুল কার্যক্রমে অকুন্ঠভাবে আর্থিক সহায়তার হাত প্রসারিত করে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড যে সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই এক বিরল দৃষ্টান্ত। এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ মর্যাদার আসনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড সর্বদা প্রস্তুত। তাদের সহযোগিতা ব্যতীত এত বড় অর্জন সম্ভব ছিল না। এজন্য বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে।
শুধু জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, উৎসব ও বায়োক্যাম্প নয়, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সারা বছর জুড়ে জীববিজ্ঞান বক্তৃতা – বায়োটক, জীববিজ্ঞান বিষয়ক নানা কর্মশালা ও প্রতিযোগিতা, প্যারালাল বায়োলজি স্কুল কার্যক্রম প্রভৃতি পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড শুধু আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের জন্যে উপযুক্ত প্রতিযোগী নির্বাচনের একটি প্রক্রিয়া নয়, একই সাথে এটি, স্কুল পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীববিজ্ঞান বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার একটি সমন্বিত প্রয়াস। বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যের জন্য…
ফোন নং: ০১৮১৬৬৫৩৩৫৮ (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড)
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: www.bdbo.org
ফেসবুক গ্রুপ: facebook.com/groups/bdbo.mail
ইমেইল: [email protected], [email protected]